স্বাস্থ্যরক্ষা ও যোগব্যায়াম

পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - স্বাস্থ্যরক্ষা ও যোগব্যায়াম এবং আসন | | NCTB BOOK
15
15

আমরা জানি, শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার নাম স্বাস্থ্যরক্ষা। শরীর ও মন সুস্থ না থাকলে জীবন হয় অশান্তিময় । ঠিকমতো ধর্মচর্চাও করা যায় না। তাই তো বলা হয়েছে, ‘শরীরম্ আদ্যং খলু ধর্ম - সাধনম্।' আগে শরীরের দিকে মনোযোগ দিয়ে স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে। তারপর ধর্মসাধনা। স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য বেশ কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত খেলাধুলা, ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, পরিমিত আহার, মাঝে-মাঝে উপবাস, সুখে-দুঃখে সকল অবস্থায় মনকে প্রফুল্ল রাখা ইত্যাদি।

এখন স্বাস্থ্যরক্ষার উপায় হিসেবে যোগব্যায়াম সম্পর্কে আলোচনা করা যাক ।

 

যোগব্যায়াম

অনেক অনেক আগের কথা। মুনি-ঋষিরা ঈশ্বরের উপাসনা করতে গিয়ে দেখলেন, শরীর নীরোগ ও কর্মক্ষম না হলে ঈশ্বর-চিন্তা কেন, কোনো কাজই ভালোভাবে করা যায় না। তাঁরা তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাশাপাশি যোগসাধনার পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন, যাতে শরীর ও মন সুস্থ থাকে, কর্মক্ষম থাকে এবং একমনে ঈশ্বরের উপাসনা করা যায় ৷

এ যোগসাধনার একটি উপায় হলো যোগব্যায়াম। শ্বাসপ্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ, শরীরকে চালনা করার বিশেষ-বিশেষ পদ্ধতি, আসন ইত্যাদিকে এক কথায় যোগব্যায়াম বলা হয়।

যোগ শব্দটির দুটো অর্থ আছে। একটি হচ্ছে ঈশ্বরের সঙ্গে যোগ। অপরটি হচ্ছে চিত্তবৃত্তির নিরোধ। আমাদের মন এবং ইন্দ্রিয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে আমরা শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর কাজ করতে না পারি। যোগব্যায়াম হচ্ছে শরীর ও মনকে নিয়ন্ত্রণ করে স্বাস্থ্যরক্ষার অন্যতম উপায়।

নিচের ছকটি পূরণ করি :

১। শরীরকে সুস্থ রাখার নাম 
২। শরীর ভালো না থাকলে 
৩। যোগব্যায়াম স্বাস্থ্যরক্ষার 

যোগব্যায়াম অনুশীলন করলে-

• মস্তিষ্কের ধারণ শক্তি বাড়ে। 

• স্নায়ু সতেজ ও মাংসপেশি সবল হয়। 

• কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। 

• রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ে। 

• কিছু-কিছু রোগ সেরে যায়। 

• দেহের শক্তির পাশাপাশি মনের শক্তি বাড়ে।

 

পরিমিত আহার

পরিমিত আহার স্বাস্থ্যরক্ষার অন্যতম উপায়। খাদ্য ও পানীয় গ্রহণকে আমরা ‘আহার' বলি। বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, কর্মশক্তি ও রোগ প্রতিরোধের শক্তি সৃষ্টির জন্য আহারের প্রয়োজন। তবে সে আহার পরিমিত ও পুষ্টিকর হওয়া চাই ।

কিন্তু আমরা সাধারণত মুখরোচক খাবার খেতে পছন্দ করি। আর মুখরোচক খাবার পেলে বেশি করে খেতে থাকি । বেশি আহার বা অপরিমিত আহার যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আমরা তা ভুলে যাই। তখন অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই তো শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছেন, ‘বেশি খাবি তো কম খা। ’

একদম না খেলে দেহের ক্ষয়পূরণ হবে না, কর্মশক্তি সৃষ্টি হবে না। আমরা দুর্বল হয়ে পড়ব। আমাদের দেহ অচল হয়ে পড়বে। তারপর দেহ বিনষ্ট হবে। জীবনের ঘটবে অবসান। বেঁচে থাকার জন্যই আহারের প্রয়োজন। আবার অপরিমিত আহারও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। আমাদের দেহ ও মনকে অসুস্থ করে তোলে। কখনো কখনো জীবনেরও অবসান ঘটায়।

সুতরাং আমরা প্রয়োজনমতো এবং পরিমিত আহার গ্রহণ করব। অপরিমিত আহার গ্রহণ থেকে বিরত থাকব।

 

উপবাস

আহার গ্রহণে বিরতি দেওয়ার নাম উপবাস। উপবাসের আরেক নাম অনশন। চলতি কথায় উপবাসকে বলে ‘উপোস’।

শরীর এক বিচিত্র যন্ত্ৰ ৷

একদম উপোস করে থাকলে শরীর অচল হয়ে যাবে। আবার বেশি খেলেও শরীরের ক্ষতি হবে। আবার এই শরীর সুস্থ রাখার জন্য মাঝে মাঝে উপবাস করতে হয়। হিন্দুধর্ম গ্রন্থে পরিমিত আহার গ্রহণের উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি নিয়ম করে উপবাস থাকার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। মাঝে মাঝে পরিমিত সময়ের উপবাস শরীরের খাদ্যগ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। তাই হিন্দুধর্মে একাদশী, পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে উপবাস করতে বা হালকা খাবার গ্রহণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

যোগব্যায়াম, পরিমিত আহার ও উপবাস ধর্মের অঙ্গ। যে শরীর ও মন দিয়ে আমরা ঈশ্বর ও দেব-দেবীর উপাসনা করব, তা যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে আমরা সঠিকভাবে তাঁর উপাসনা করতে পারব না। তাই সঠিকভাবে ধর্মচর্চার জন্য শরীর ও মনের সুস্থতা প্রয়োজন। আর যোগব্যায়াম হচ্ছে শরীর ও মন সুস্থ রাখার অন্যতম উপায়। একই কথা পরিমিত আহার গ্রহণ ও উপবাসের ক্ষেত্রেও খাটে।

পূজা-পার্বণ ও ধর্মানুষ্ঠানের সময় আমরা উপবাস থাকি। পূজা হয়ে গেলে আমরা উপবাস ভেঙে আহার গ্রহণ করি। যেমন সরস্বতীপূজার সময় আমরা অঞ্জলি দেওয়ার পর - আহার গ্রহণ করি।

যোগব্যায়াম ঈশ্বরের সঙ্গে যোগের জন্য শরীর ও মনকে প্রস্তুত করে। পরিমিত আহার গ্রহণ ও উপবাস আমাদের সংযম শেখায়। আর সংযম ধর্মের অন্যতম লক্ষণ। সাধনার প্রথম সোপান।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যোগব্যায়াম, পরিমিত আহার এবং উপবাসের সঙ্গে ধর্মের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

Content added By

অনুশীলনী

7
7

শূন্যস্থান পূরণ কর :

১। শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার নাম ___। 

২। আগে শরীর পরে ___।

৩। যোগসাধনার একটি উপায় হলো ___।

৪। পরিমিত আহার ___ জন্য উপকারী। 

৫। স্বাস্থ্যের জন্য আহারের পাশাপাশি ___ প্রয়োজন।

 

ডান পাশ থেকে শব্দ এনে বাম পাশের শব্দের সঙ্গে মেলাও :

১। আগে শরীর পরে

২। স্বাস্থ্যরক্ষার একটি উপায় প্রয়োজন

৩। পরিমিত আহার স্বাস্থ্যের জন্য

৪। উপবাস আহার গ্রহণের ক্ষমতা

যোগব্যায়াম।

প্রয়োজন।

বাড়ায়।  

ধর্মসাধনা । 

মুখরোচক খাবার।

 

নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষেপে উত্তর দাও :

১। যোগব্যায়াম কাকে বলে? 

২। উপবাস বলতে কী বোঝ? 

৩। আহার বলতে কী বোঝায় ? 

৪। একদম না খেলে কী হয় ? 

৫। শরীর সুস্থ রাখার একটি উপায় লেখ।

 

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

১। যোগব্যায়াম কাকে বলে বুঝিয়ে লেখ। 

২। যোগব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর। 

৩। পরিমিত আহার বলতে কী বোঝ? 

৪। যোগব্যায়ামের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর। 

৫। উপবাসের উপকারিতা কী? 

৬। ‘উপবাস ধর্মের অঙ্গ। ’ ব্যাখ্যা কর। 

৭। কোন কোন তিথিতে বিশেষভাবে উপবাস পালনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

যোগব্যায়াম
প্রচুর খাবার
মুখরোচক খাবার
প্রতিনিয়ত উপবাস
ক্লান্ত হয়
দুর্বল হয়
স্বাস্থ্যবান হয়
মোটা হয়
Promotion